Skip to main content
 

বাগেরহাট ও বাগেরহাট বিচার বিভাগ

একনজরে বাগেরহাট

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষে বাগেরহাট জেলার অবস্থান। আজকের বাগেরহাট ১৮৪২ সালে খুলনা মহকুমার অন্তর্গত একটি থানা, ১৮৬৩ সালে যশোর জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী জেলায় উন্নীত হয়। বাগেরহাট জেলার মোট আয়তন ৫৮৮২.১৮ বর্গ কিলোমিটার (১,৮৩৪.৭৪ বর্গ কিঃমিঃ বনাঞ্চলসহ)।

ঐতিহাসিক পটভূমি

বাগেরহাটের নাম কে কবে দিয়েছিলেন তা গবেষণা সাপেক্ষ হলেও আজ তা নিরূপন করা দুঃসাধ্য। কারো কারো  মতে বাগেরহাটের নিকটবর্তী সুন্দরবন থাকায় এলাকাটিতে বাঘের উপদ্রব ছিল, এ জন্যে  এ এলাকার নাম হয়ত ‘‘বাঘেরহাট’’ হয়েছিল এবং ক্রমান্বয়ে তা বাগেরহাট-এ রূপান্তরিত হয়েছে। মতান্তরে হযরত খানজাহান (রঃ) এর প্রতিষ্ঠিত ‘‘খলিফাত-ই-আবাদ’’ এর বিখ্যাত ‘‘বাগ’’ অর্থ বাগান, এ অঞ্চলে এতই সমৃদ্ধি লাভ করে যে, তা থেকেই হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগের আবাদ তথা ‘‘ বাগেরহাট’’তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হচ্ছে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদীর উত্তর দিকের হাড়িখালী থেকে বর্তমান নাগের বাজার পর্যন্ত যে লম্বা বাঁক অবস্থিত, পূর্বে সে বাঁকের পুরাতন বাজার এলাকায় একটি হাট বসত। আর এ হাটের নামে এ স্থানটির নাম হলো বাঁকেরহাট। কালক্রমে বাঁকেরহাট পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগেরহাট নামে।

বাগেরহাট খুব পুরনো ভূখন্ড না হলেও বাগেরহাটের সমৃদ্ধির ইতিহাস উপমহাদেশের বহু প্রাচীন জনপদের সমকালীন ও সমপর্যায়ের। হযরত খানজাহান(রঃ) এর সময় এ অঞ্চলের দীঘি খননকালে বিশেষ করে ‘‘ খাঞ্জেলী দীঘি’’ খননকালে পাওয়া ধ্যানী বুদ্ধমূর্তি থেকে অনুমিত হয় হযরত খানজাহান(রঃ) এর আগমনের বহুপূর্ব হতেই বাগেরহাটে এক বিস্মৃত জনপদ ছিল 

বাংলার শাসক যখন নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৪২-১৪৫৯) তখন হযরত খানজাহান (রঃ) এ অঞ্চল আবাদ করে নামকরণ করলেন ‘‘ খলিফাত-ই-আবাদ’’ বা প্রতিনিধির অঞ্চল। মানুষের কল্যাণে তিনি তৈরী করলেন ষাটগম্বুজসহ অসংখ্য মসজিদ, দীঘি ও পত্তন করেন অগণিত হাট-বাজার। হযরত খানজাহান(রঃ) এর আগমনকাল না জানা গেলেও এ সাধক পুরুষ পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বহু ধর্মপ্রাণ অনুসারিদের সাথে নিয়ে যশোর জেলার বার-বাজার হয়ে ভৈরব নদী অতিক্রম করে বাগেরহাট পৌঁছান। তাঁর মাজারগাত্রে উৎকীর্ণ শীলালিপি হতে জানা যায় ২৬ জিলহজ্ব ৮৬৩ হিজরী (১৪৫৯ খ্রিঃ) তে তিনি ইন্তেকাল করেন।

১৭৮৬ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিসের শাসন আমলে যশোরকে জেলায় পরিণত করা হয়। ১৮৪২ সালে খুলনা যখন যশোর জেলার একটি মহকুমা তখন বাগেরহাট খুলনার অন্তর্গত একটি থানা। ১৮৪৯ সালে মোড়েল উপাধিধারী দু’জন ইংরেজ বাগেরহাটে মোড়েলগঞ্জ নামক একটি বন্দর স্থাপন করেন। ১৮৬১ সালের ২৬ নভেম্বর ‘‘মোড়েল-রহিমুলস্নাহ’’ নামে খ্যাত এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, তখন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র  খুলনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সংঘর্ষের তদন্ত তিনিই করেন এবং প্রশাসনিক প্রয়োজনে বাগেরহাটে একটি মহকুমা স্থাপন করার সুপারিশ করেন। ফলশ্রুতিতে ১৮৬৩ সালে বাগেরহাট মহকুমা হিসেবে যশোর জেলার অন্তর্গত হয়। ১৮৮২ সালে খুলনা, সাতক্ষিরা ও বাগেরহাট মহকুমা নিয়ে খুলনা জেলা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি বাগেরহাট মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।

 

মুক্তিযুদ্ধ ও বাগেরহাট

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বাগেরহাট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও সুন্দরবন অঞ্চলে দূর্ভেদ্য ঘাঁটি এক অনন্য দৃষ্টান্ত  স্থাপন করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাট জেলা ছিল ৯ নং সেক্টরের অধীন। ২১ এপ্রিল পাকসেনারা খালিশাখালী ও বাবুগঞ্জ বাজারে প্রায় ২০০ লোককে হত্যা করে। মোড়েলগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের লড়াইয়ে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং তারা শরণখোলা উপজেলার ত্যাঁড়াবাঁকা খালের মধ্যে শতাধিক লোককে হত্যা করে। ৩ মে কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের শাখারিকাঠী হাটে পাকসেনারা ৪২ জন লোককে হত্যা করে। ২১ মে রাজাকারেরা রামপাল উপজেলার বেশসংখ্যক লোককে হত্যাসহ ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ২৫ আগস্ট ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদিয়া ইউয়নের মানসায় পাকসেনা ও রাজাকারেরা মিলিতভাবে ৯ জন এবং ১৫ অক্টোবর কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউয়নের ভাসা বাজার থেকে ৭০ জন নিরীহ বাঙালীকে ধরে নিয়ে গ্রামের ভাসারহাট পুলের কাছে হত্যা করে। এছাড়াও স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মোল্লাহাটের চাকুলিয়া (চরকুলিয়া) নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের লড়াইয়ে একজন ক্যাপ্টেনসহ ২০০ পাকসেনা নিহত হয়। ১৯৮৪  সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয়। বাগেরহাট ০৯টি উপজেলা,৭৫টি ইউনিয়ন, ১০৪৭ টি গ্রাম এবং ০৩ টি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত একটি ”এ” ক্যাটাগরীভূক্ত জেলা।

বাগেরহাট বিচার বিভাগ

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ইংরেজি ১৮৭২ সালে এখানে সর্বপ্রথম মুন্সেফ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পর্যায়ক্রমে এখানে তিনটি সাব জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়।  ১৯৮৪ সালে বাগেরহাট বৃহত্তর খুলনা থেকে স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে উন্নীত হয় এবং বাগেরহাটে জেলা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে জনাব আব্দুল মতিন চৌধুরী ইংরেজি ১৯৮৪ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপরে জনাব মোহাম্মদ আজিজুল হক জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী তৃতীয় জেলা ও দায়রা জজ জবাব আব্দুল কাদির  দায়িত্বরত অবস্থায় (৩০-০৩-৯১ খ্রিঃ) মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে জনাব মোহাঃ রবিউল ইসলাম বাগেরহাট জেলার  ১৯তম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাগেরহাট জেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের বর্তমানে মোট ২৮ টি আদালত রয়েছে। এর মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ছাড়াও আরো ২ টি জেলা জজ পর্যায়ের আদালত ( নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল), ৩ টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ২ টি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ১ টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ৪ টি সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, ৫ টি সহকারী জজ আদালত রয়েছে। অন্যদিকে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আদালতসহ ৩টি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ৪ টি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে।  ঐতিহ্যবাহী বাগেরহাট আইনজীবী সমিতিতে বর্তমানে প্রায় চার শতাধিক বিজ্ঞ আইনজীবী আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।